'ম' তে মোজার্ট এবং আরো কিছু
পুরো নাম উলফগ্যাং অ্যামাদিউস
মোজার্ট। মৃত্যুবরণ করেন ১৭৯১ সালের দিকে। হঠাৎ করে তার মৃত্যুর ২০০ বছর পরে তাকে নিয়ে হুলস্থল শুরু হয়ে গেল!
আসলে এভাবে বলাটা একটু ভুল হয়ে যায়; কেননা মোজার্ট অবশ্যই এতদিন কোনরকমের হেলাফেলার
বিষয় ছিল না। কিন্তু এবার তাকে নিয়ে হইচইটা একটু বেশিই হলো। কিন্তু কেন?
বলা হলো, ১৭৮১ সালের দিকে D মেজর স্কেলে কম্পোজ করা সিম্ফনি শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। মানুষের বুদ্ধিমত্তার উপর মোজার্টের মিউজিকের প্রভাব “মোজার্ট ইফেক্ট” নামে পরিচিত।
আসলেই? সত্যি?
বলা হলো, ১৭৮১ সালের দিকে D মেজর স্কেলে কম্পোজ করা সিম্ফনি শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। মানুষের বুদ্ধিমত্তার উপর মোজার্টের মিউজিকের প্রভাব “মোজার্ট ইফেক্ট” নামে পরিচিত।
১৯৯৩ সালে "নেচার" জার্নালে
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার মনোবিজ্ঞানী ফ্রান্সেস এইচ. রশার এবং তার কয়েকজন
সহকর্মী মিলে একটি গবেষণা প্রকাশ করেন। সেখানে তারা দাবি করেন যে, মোজার্ট মিউজিক শোনানোর
মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিশেষ কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে পারদর্শিতা বৃদ্ধি পায়।
"এইত গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া
গেছে। আজকে থেকেই এইসব হরলিক্স, কমপ্ল্যান সব বাদ! শিশুর জন্য শুধুই দিনে তিনবেলা
মোজার্ট!"
উহ! যদি বলি গবেষণায় পাওয়া
গেছে, যারা বাম হাত দিয়ে ডিম খায় তারা অধিক বছর বেঁচে থাকে! বিশ্বাস করবেন? কোন
গবেষণায় কি পাওয়া গেছে, সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি কিংবা তারচেয়েও বেশি
গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাটি কীভাবে করা হয়েছে। তাহলে এবার রশার এর গবেষনার দিকে চোখ
ফেরানো যাক। কিভাবে গবেষণাটি করেছিলেন তারা?
ইউনিভার্সিটির অ্যান্ডারগ্রাজুয়েট
শিক্ষার্থীদের তিনটি দল নিয়ে তারা কাজ করেন। প্রথম দলটিকে ১০ মিনিট ধরে মোজার্টের
মিউজিক শোনানো হয়। দ্বিতীয় দলটি ১০ মিনিট ধরে সাধারণ রিলাক্সেশন মিউজিক শুনে। এবং
সর্বশেষ দলটি ১০ মিনিট ধরে চুপচাপ বসে থাকে। এরপরে তাদের সকলকে একটি কাগজকে
বিশেষভাবে ভাঁজ করার পরে খোলা হলে সেটি কিরকম আকৃতি নেবে, সেটা অনুমান করতে বলা হয়।
দেখা গেল, যাদের মোজার্ট মিউজিক শোনানো হয়েছিল তারা এটি ৫৭.৫৬% সঠিকভাবে অনুমান করাতে
পেরেছিল। অন্যদিকে যাদের রিলাক্সেশন মিউজিক শোনানো হয়েছিল তারা ৫৪.৬১% এবং যারা
চুপচাপ বসে ছিল তারা ৫৪% সঠিকভাবে আকৃতি অনুমান করতে পেরেছিল।
ব্যাস, হইছে! এইবার শান্তি?
তবে শান্তি মনে হয় সবচেয়ে বেশি পেয়েছিলেন এলেক্স রস। নিউইয়র্ক টাইমসের কলামিষ্ট। এই
গবেষণা নিয়ে কলাম লিখে ফেললেন “গবেষকগণ নিশ্চিত হয়েছে মোজার্ট মিউজিক শোনার ফলে
আপনি আরো প্রতিভাবান হয়ে উঠবেন” (!) শিরোনাম দিয়ে!
আর যায় কোথায়! মোজার্ট ইফেক্ট রাতারাতি সুপার-ডুপার হিট হয়ে যায়। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা যাতে বৃদ্ধি পায় সেজন্য হাসপাতালগুলোতে নবজাতকদের হেডফোনের মাধ্যমে মিউজিক শোনানোর ব্যবস্থা করা হয়। এমনকি জর্জিয়ার গভর্নত জেল মিলার বার্ষিক ১ লক্ষ ৫ হাজার ডলারের অর্থ বরাদ্দ দাবী করেন, যাতে করে নবজাতকদের কাছে ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকের সিডি বা টেপ পাঠানো যায়।
আর যায় কোথায়! মোজার্ট ইফেক্ট রাতারাতি সুপার-ডুপার হিট হয়ে যায়। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা যাতে বৃদ্ধি পায় সেজন্য হাসপাতালগুলোতে নবজাতকদের হেডফোনের মাধ্যমে মিউজিক শোনানোর ব্যবস্থা করা হয়। এমনকি জর্জিয়ার গভর্নত জেল মিলার বার্ষিক ১ লক্ষ ৫ হাজার ডলারের অর্থ বরাদ্দ দাবী করেন, যাতে করে নবজাতকদের কাছে ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকের সিডি বা টেপ পাঠানো যায়।
মোজার্ট ইফেক্টের এই ঝড় শুধু
মানুষের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকলেও চলত। কিন্তু এর প্রভাব যে মানুষ ছেড়ে গরুদের মধ্যেও
চলে যায়! ইউনিভার্সিটি অব ইডেনাবার্গের মনোবিজ্ঞানী সার্গিও ডেলা সালার বর্ণনা
থেকে পাওয়া যায়, ইতালির এক গরুর খামারের কৃষকেরা তাদের গরুগুলোকে দিকে তিনবার করে
মোজার্টের মিউজিক শোনাতো (!) যাতে করে গরুগুলো আরো বেশি করে দুধ দেয়!
ঠিক আছে, এতসব কিছু বুঝলাম,
কিন্তু তবুও যে সমস্যা থেকে যাচ্ছে। প্রথমত, ঠিক কতজনের উপর এই গবেষণাটি করা
হয়েছিল?
৩৬ জন। অ্যা! মাত্র ৩৬ জন! মাত্র ৩৬ জনের ক্ষেত্রে যেটা পাওয়া গেছে সেটা কিভাবে সকলের জন্য সত্যি হবে?
৩৬ জন। অ্যা! মাত্র ৩৬ জন! মাত্র ৩৬ জনের ক্ষেত্রে যেটা পাওয়া গেছে সেটা কিভাবে সকলের জন্য সত্যি হবে?
দ্বিতীয়ত, বর্ষাকালে ব্যাঙ
ডাকে। তারমানে কি বলব ব্যাঙের ডাকের পিছনে বর্ষাকাল দায়ী? মোটেও না। বরং আমরা জানি বর্ষাকাল
হচ্ছে ব্যাঙের প্রজননকাল। এইসময়ে সঙ্গিনীকে আকৃষ্ট করার জন্য ব্যাঙ ডেকে থাকে।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, ব্যাঙের ডাকের পেছনে কারণ হিসাবে বর্ষাকালকে দায়ী করলে সেটা
মোটেও যুক্তিসংগত হবে না। ঠিক তেমনি মোজার্টের মিউজিক শোনার কারণেই কাগজের আকৃতি অনুমান করার
ক্ষেত্রে সফলতা বেশি ছিল, বলাটা কি ঠিক হবে?
এমনো তো হতে পারে, যাদের ১০ মিনিট ধরে চুপচাপ বসিয়ে রাখা হয়েছিল, তারা হয়ত এই চুপচাপ করে বসে থাকতে যেয়ে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল! যেটা তাদের উপর পরবর্তিতে প্রভাব ফেলতে পারে?
এমনো তো হতে পারে, যাদের ১০ মিনিট ধরে চুপচাপ বসিয়ে রাখা হয়েছিল, তারা হয়ত এই চুপচাপ করে বসে থাকতে যেয়ে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল! যেটা তাদের উপর পরবর্তিতে প্রভাব ফেলতে পারে?
আর, বলা হয়েছিল মোজার্টের
মিউজিক বাচ্চাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে। কিন্তু এখানে তো
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা হয়েছে! তাহলে এই ফলাফল বাচ্চাদের
ক্ষেত্রে কতটা উপযোগী হবে?
তাহলে কি বলব, বুদ্ধিমত্তা
বৃদ্ধির সাথে মোজার্ট মিউজিকের কোন সম্পর্ক নেই? না। কেবলমাত্র একটি গবেষণার উপর
ভিত্তি করে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। আরো গবেষণা করার দরকার আছে।
আরো গবেষণা হলো এই মোজার্ট মিউজিকের উপর। বাচ্চাসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষদের নিয়ে গবেষণা করা হয়। এরকম একটি গবেষণা ২০০৮ সালে ব্রিটেনে আট হাজার শিশুর উপর করা হয়। তবে এখানে শুধু তাদের মোজার্টের মিউজিক শোনানো হয় নি, বরং এর পাশাপাশি অন্যান্য বিভিন্ন মিউজিক শোনানো হয়। দেখা গেল যে, শুধু মোজার্ট মিউজিক না, পপ মিউজিকও বস্তুর নকশা অনুযায়ী এর আকৃতি অনুমান করতে সাহায্য করে।
এভাবে অন্তত ১৬ টি গবেষণার মাধ্যমে দেখা যায় যে, মিউজিক মনে মনে বস্তুর আকৃতি চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তবে সেটা সাময়িকভাবে, স্থায়ীভাবে বুদ্ধিমান করে তোলে না। এবং এতে মোজার্টের মিউজিকের আলাদা করে গুরুত্ব নেই! পরবর্তিতে দেখা যায়, শুধুমাত্র মিউজিক না, কোন বইয়ের বিশেষ অংশ জোরে জোরে পড়া কিংবা কফি পান বা খেলাধুলা করার মাধ্যমে পাজল জাতীয় এইরকম সমস্যা সমাধানের জন্য মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় উদ্দীপনা প্রদান করে থাকে। এবং সেগুলো অবশ্যই ব্যক্তির জন্য উপভোগের বিষয় হতে হবে।
আরো গবেষণা হলো এই মোজার্ট মিউজিকের উপর। বাচ্চাসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষদের নিয়ে গবেষণা করা হয়। এরকম একটি গবেষণা ২০০৮ সালে ব্রিটেনে আট হাজার শিশুর উপর করা হয়। তবে এখানে শুধু তাদের মোজার্টের মিউজিক শোনানো হয় নি, বরং এর পাশাপাশি অন্যান্য বিভিন্ন মিউজিক শোনানো হয়। দেখা গেল যে, শুধু মোজার্ট মিউজিক না, পপ মিউজিকও বস্তুর নকশা অনুযায়ী এর আকৃতি অনুমান করতে সাহায্য করে।
এভাবে অন্তত ১৬ টি গবেষণার মাধ্যমে দেখা যায় যে, মিউজিক মনে মনে বস্তুর আকৃতি চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তবে সেটা সাময়িকভাবে, স্থায়ীভাবে বুদ্ধিমান করে তোলে না। এবং এতে মোজার্টের মিউজিকের আলাদা করে গুরুত্ব নেই! পরবর্তিতে দেখা যায়, শুধুমাত্র মিউজিক না, কোন বইয়ের বিশেষ অংশ জোরে জোরে পড়া কিংবা কফি পান বা খেলাধুলা করার মাধ্যমে পাজল জাতীয় এইরকম সমস্যা সমাধানের জন্য মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় উদ্দীপনা প্রদান করে থাকে। এবং সেগুলো অবশ্যই ব্যক্তির জন্য উপভোগের বিষয় হতে হবে।
তারমানে দেখা যাচ্ছে
মোজার্ট ইফেক্টের নামে যে ধারণাটি প্রচলিত ছিল, তার পিছনে কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবে কিনা, বাচ্চাদের যদি মোজার্টের
মিউজিক শোনানো হয় তাহলে কিন্তু ভালোই হবে। মিউজিক কিংবা ক্ল্যাসিক মিউজিকের উপর
একটা আগ্রহ তৈরি হবে। সেটাই বা খারাপ কিসে!
সবশেষে,
১. মোজার্ট ইফেক্ট নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন ওন্টারিও'র কগনিটিভ নিউরোসাইন্টিস্ট জেসিকা গ্রাহনের লেকচার।
https://www.youtube.com/watch?v=fDfVsFxJXms
https://www.youtube.com/watch?v=fDfVsFxJXms
২. মোজার্টের সিম্ফোনিগুলো
https://www.youtube.com/watch?v=b4IXXpTHjok&list=PL_xjLdM_2tvKnPIN37-8whCoOy_n1oZQ7
https://www.youtube.com/watch?v=b4IXXpTHjok&list=PL_xjLdM_2tvKnPIN37-8whCoOy_n1oZQ7
৩. Jakob Pietschnig, Martin Voracek, Anton K. Formann . Mozart effect-Shmozart effect: A meta-analysis. Intelligence, 2010; 38 (3): 314 DOI: 10.1016/j. intell . 2010.03.001
৫. http://www.bbc.com/future/story/20130107-can-mozart-boost-brainpower
৬. http://en.wikipedia.org/wiki/Mozart_effect
Comments
Post a Comment