অ্যাশ'এর কনফর্মিটি এক্সপেরিমেন্ট: আপনার মতামত কতখানি আপনার?
স্ট্যাটিস্টিকস পরীক্ষা। পরীক্ষা দিচ্ছেন, কিন্তু একটা প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আপনি নিজে সন্দিহান। আপনার উত্তরটা সঠিক কিনা বুঝতে পারছেন না! মাথা ঘুরিয়ে আপনার পাশের বন্ধুটির কাছ থেকে উত্তরটি জেনে নিলেন। দেখা গেল তার উত্তরটিও আপনার কাছে সঠিক বলে মনে হচ্ছে না। এজন্য আপনি আরেকজন বন্ধুর কাছে সেটার উত্তরটা শুনে নিলেন। আপনার এই বন্ধুটিও ঠিক আগের উত্তরটাই দিয়েছে! আপনি
তো পড়লেন মহাঝামেলায়! বন্ধুদের দেওয়া উত্তরটি আপনার কাছে সঠিক বলে মনে হচ্ছে না, আবার নিজেরটাও কেমন কেমন জানি মনে হচ্ছে! শেষপর্যন্ত আপনার উত্তরটি কেঁটে দিয়ে খাতায় তাদের উত্তরটাই লিখে দিয়ে আসলেন। কিন্তু পরে দেখলেন যে আপনার উত্তরটাই ঠিক ছিল! কি নিজেকে আহাম্মক বলে মনে হচ্ছে? বারবার মনে হফফচ্ছে কেন এই কাজটা করলেন? কেন অন্যদের কথা শুনলেন? কেন?
এমনই কিছু প্রশ্ন হয়ত উঁকি দিয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৬৫ বছর আগে সোয়ার্থমোর কলেজের অধ্যাপক ড. সোলোমন অ্যাশ’এর (Solomon Asch) মনের ভেতরে(তবে তার নিজের বেলায় পরীক্ষার সময় এমন কিছু হয়েছিল কিনা সেটা বলতে পারছি না)। এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি যে কাজটি করলেন কালের প্রভাবে সেটি জায়গা করে নিয়েছে সাইকোলজির কিছু ক্লাসিক এক্সপেরিমেন্টের তালিকায়। অ্যাশ’এর কনফর্মিটি এক্সপেরিমেন্ট (Conformity Experiment) নামে পরিচিত এই কাজটির অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ছিল সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমাজের অধিকাংশ জনের চিন্তা-ভাবনা কি মানুষকে প্রভাবিত করে? আর যদি করে, তাহলে কতখানি করে?
প্রশ্নগুলোর উত্তর কি ছিল, সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে কনফর্মিটি (Conformity) নামের যে টার্মটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি আসলে কি বোঝাচ্ছে সে সম্পর্কে একটু নজর বোলানো যাক। প্রতিটি সমাজেই কিছু অলিখিত নিয়মকানুন আছে। এখন সমাজের একজন সদস্য হিসাবে সচেতন কিংবা অসচেতনভাবেই হোক না কেন ব্যক্তির মাঝে এসব নিয়মকানুন মেনে চলার একটা প্রবণতা দেখা যায়, সেটাকেই মূলত সোশ্যাল সাইকোলজিতে (Social Psychology) কনফর্মিটি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘দৃষ্টিশক্তির পরীক্ষা’ করা হবে এমন একটি এক্সপেরিমেন্টে অংশ নেওয়ার জন্য আহবান জানিয়ে সোয়ার্থমোর কলেজ থেকে ৫০ জন ছাত্রকে নেওয়া হয়। প্রত্যেক পার্টিসিপেন্টকে সাতজন অন্য ব্যক্তির সাথে আলাদা একটি রুমে বসানো হয়। এই
সাতজন কিন্তু আগে থেকে ঠিক করা ছিল, এবং তাদের কাজও আগে থেকে নির্ধারিত। তবে এই বিষয়টা আমাদের পার্টিসিপেন্ট মাহাশয় কিন্তু জানেন না! এরপর রুমের সকলের সামনেই সোজাসুজিভাবে লম্বা একটা রেখা দেখিয়ে, তাদেরকে তিনটি অপশন (A, B, C) দেওয়া হয় এবং বলা হয় এই তিনটি অপশনের মধ্যে কোনটি দেখানো রেখাটির সাথে মিলে যায়। খুব সহজ একটা কাজ সন্দেহ নেই। তবে, যে সত্যিকারের পার্টিসিপেন্ট তাকে সবার শেষে উত্তর দিতে বলা হয়। এভাবে মোট ১৮টি ট্রায়াল নেওয়া হয়, যার মধ্যে ১২টিতে অন্য যে সাতজন ছিল তাদের আগে থেকেই বলে দেওয়া হয়েছিল তারা যেন ইচ্ছে করেই ভূল উত্তর দেয়।
৩৭ জনের এরেকটি গ্রুপ নেওয়া হয়, যেখানে আর আগে থেকেই ঠিক করা রয়েছে এমন কেউ ছিল না, সকলেই সত্যিকারের পার্টিসিপেন্ট। তাদের ক্ষেত্রেও একইভাবে একটি রেখা দেখিয়ে বলা হয় অপশন তিনটির মধ্যে কোনটির সাথে রেখাটির মিল আছে।
সকলের দেওয়া উত্তরগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রথম গ্রুপের এক-তৃতীয়াংশ (প্রায় ৩২%) গ্রুপের অন্যদের দেওয়া ভূল উত্তরের সাথে একমত প্রকাশ করেছে। এবং যে ১২টি ট্রায়ালে অন্যদের বলা হয়েছিল ইচ্ছে করেই ভূল উত্তর দেওয়ার জন্য প্রায় ৭৫% এর মতন পার্টিসিপেন্ট অন্তত একটি ট্রায়ালে হলেও অন্যদের দেওয়া ভূল উত্তরের সাথে সহমত জানিয়েছিল। আর ৩৭ জনের অন্য যে গ্রুপটি নেওয়া হয়েছিল তাদের ক্ষেত্রে এই ভূল উত্তর দেওয়ার প্রবণতা ছিল ১% এর চেয়েও কম।
এখন কথা হচ্ছে, ভূল আপনি-আমি সবাই করতেই পারি, এটা নিয়ে এত হইচই করার কি আছে! আছে। এক্সপেরিমেন্টের পরে আলাদা আলাদাভাবে প্রত্যেক পার্টিসিপেন্টের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। সেখানে তারা জানায় যে, যেসব ভূল উত্তরগুলো তারা দিয়েছে সেগুলো যে ভূল সেটা তারা বুঝতে পারেছিল (!) তবুও যেহেতু রুমের অন্যান্য সবাই সেটাকেই সঠিক বলে দাবি করছিল, তাই তারা সেটাই উত্তর দিয়েছিল। তাদের আলোচনা থেকে অন্যদের সাথে সহমত প্রকাশ করার দুটো কারণ পাওয়া যায়,
এক, তারা নিজেদেরকে গ্রুপের বাইরের কেউ হিসাবে চিন্তা করতে ইচ্ছুক ছিল না।
দুই, তাদের ধারণা ছিল গ্রুপের অন্যান্যরা তাদের চেয়ে অধিক জ্ঞান রাখে।
অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে আমারা যেই গ্রুপে থাকি না কেন, তার সদস্যদের একটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে, যেটাকে আমরা বলছি গ্রুপ প্রেশার (Group Pressure)। এই গ্রুপ প্রেশার আবার কয়েকটি ফ্যাক্টর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
প্রথমেই গ্রুপের সাইজ কিংবা সদস্য সংখ্যা কত হবে। দেখা গেছে যে, যদি কেবল মাত্র একজন হয় তাহলে তার সাথে একমত প্রকাশ করার হার মাত্র ১%। আর যদি সদস্য সংখ্যা দুইজন হয় সেক্ষেত্রে সেটা বেড়ে গিয়ে পার ১৩% এ দাড়ায়। এবং যদি তিনজন হয় তাহলে একমত হওয়ার হার হয় ৩২%। কিন্তু সদস্য সংখ্যা যদি আরো বেশি হয় সেক্ষেত্রে তাদের মতামতের সাথে একমত হওয়ার প্রবণতা খুব একটা বৃদ্ধি পায় না।
দ্বিতীয়ত গ্রুপের সকলের মতামত একই কিনা। অ্যাশ’এর যে এক্সপেরিমেন্টে আগে থেকেই ঠিক করে রাখা সাতজন ছিল তারা সকলেই একই উত্তর দিয়েছিল। যদি এমন হত সাতজন ভিন্ন ভিন্ন উত্তর দিত, তাহলে? ১৯৫৬ সালে পরবর্তীতে এই এক্সপেরিমেন্টি আবার করা হয়, তখন দেখা যায় আগে থেকে ঠিক করে রাখা ব্যক্তিদের মধ্যে কেবলমাত্র একজনের উত্তর ভিন্ন হওয়ার কারণে গ্রুপের সকলের সাথে একমত হওয়ার প্রবণতা প্রায় ৮০% এর মতন কমে গিয়েছে!
তৃতীয়ত, যে কাজটি করতে হবে সেটা যদি জটিল হয়। অ্যাশ’এর এক্সপেরিমেন্টে উত্তর দেওয়ার জন্য তিনটি করে অপশন ছিল, যদি এমন হত চারটি অপশন হতে সঠিক উত্তর বেছে নিতে হত, তাহলে? দেখা গেছে, কাজ যত বেশি জটিল হয়, গ্রুপের অন্যান্যদের সাথে সহমত প্রকাশ করার প্রবণতাও তত বেশি বৃদ্ধি পায়।
চতুর্থত, গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদের সামাজিক মর্যাদা বা অবস্থান যদি ভালো হয়, তাহলে তাদের সাথে একমত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
শেষপর্যন্ত দেখা যাচ্ছে মানুষ হিসাবে নিজেকে যতই দাবি করি না কেন, আমি সমাজ বিচ্ছিন্ন কিংবা আমার চিন্তা-চেতনা কেবলই আমার, সেটা কতখানি সত্য সে সম্পর্কে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে!
তো পড়লেন মহাঝামেলায়! বন্ধুদের দেওয়া উত্তরটি আপনার কাছে সঠিক বলে মনে হচ্ছে না, আবার নিজেরটাও কেমন কেমন জানি মনে হচ্ছে! শেষপর্যন্ত আপনার উত্তরটি কেঁটে দিয়ে খাতায় তাদের উত্তরটাই লিখে দিয়ে আসলেন। কিন্তু পরে দেখলেন যে আপনার উত্তরটাই ঠিক ছিল! কি নিজেকে আহাম্মক বলে মনে হচ্ছে? বারবার মনে হফফচ্ছে কেন এই কাজটা করলেন? কেন অন্যদের কথা শুনলেন? কেন?
এমনই কিছু প্রশ্ন হয়ত উঁকি দিয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৬৫ বছর আগে সোয়ার্থমোর কলেজের অধ্যাপক ড. সোলোমন অ্যাশ’এর (Solomon Asch) মনের ভেতরে(তবে তার নিজের বেলায় পরীক্ষার সময় এমন কিছু হয়েছিল কিনা সেটা বলতে পারছি না)। এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি যে কাজটি করলেন কালের প্রভাবে সেটি জায়গা করে নিয়েছে সাইকোলজির কিছু ক্লাসিক এক্সপেরিমেন্টের তালিকায়। অ্যাশ’এর কনফর্মিটি এক্সপেরিমেন্ট (Conformity Experiment) নামে পরিচিত এই কাজটির অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ছিল সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমাজের অধিকাংশ জনের চিন্তা-ভাবনা কি মানুষকে প্রভাবিত করে? আর যদি করে, তাহলে কতখানি করে?
প্রশ্নগুলোর উত্তর কি ছিল, সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে কনফর্মিটি (Conformity) নামের যে টার্মটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি আসলে কি বোঝাচ্ছে সে সম্পর্কে একটু নজর বোলানো যাক। প্রতিটি সমাজেই কিছু অলিখিত নিয়মকানুন আছে। এখন সমাজের একজন সদস্য হিসাবে সচেতন কিংবা অসচেতনভাবেই হোক না কেন ব্যক্তির মাঝে এসব নিয়মকানুন মেনে চলার একটা প্রবণতা দেখা যায়, সেটাকেই মূলত সোশ্যাল সাইকোলজিতে (Social Psychology) কনফর্মিটি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘দৃষ্টিশক্তির পরীক্ষা’ করা হবে এমন একটি এক্সপেরিমেন্টে অংশ নেওয়ার জন্য আহবান জানিয়ে সোয়ার্থমোর কলেজ থেকে ৫০ জন ছাত্রকে নেওয়া হয়। প্রত্যেক পার্টিসিপেন্টকে সাতজন অন্য ব্যক্তির সাথে আলাদা একটি রুমে বসানো হয়। এই
সাতজন কিন্তু আগে থেকে ঠিক করা ছিল, এবং তাদের কাজও আগে থেকে নির্ধারিত। তবে এই বিষয়টা আমাদের পার্টিসিপেন্ট মাহাশয় কিন্তু জানেন না! এরপর রুমের সকলের সামনেই সোজাসুজিভাবে লম্বা একটা রেখা দেখিয়ে, তাদেরকে তিনটি অপশন (A, B, C) দেওয়া হয় এবং বলা হয় এই তিনটি অপশনের মধ্যে কোনটি দেখানো রেখাটির সাথে মিলে যায়। খুব সহজ একটা কাজ সন্দেহ নেই। তবে, যে সত্যিকারের পার্টিসিপেন্ট তাকে সবার শেষে উত্তর দিতে বলা হয়। এভাবে মোট ১৮টি ট্রায়াল নেওয়া হয়, যার মধ্যে ১২টিতে অন্য যে সাতজন ছিল তাদের আগে থেকেই বলে দেওয়া হয়েছিল তারা যেন ইচ্ছে করেই ভূল উত্তর দেয়।
৩৭ জনের এরেকটি গ্রুপ নেওয়া হয়, যেখানে আর আগে থেকেই ঠিক করা রয়েছে এমন কেউ ছিল না, সকলেই সত্যিকারের পার্টিসিপেন্ট। তাদের ক্ষেত্রেও একইভাবে একটি রেখা দেখিয়ে বলা হয় অপশন তিনটির মধ্যে কোনটির সাথে রেখাটির মিল আছে।
সকলের দেওয়া উত্তরগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রথম গ্রুপের এক-তৃতীয়াংশ (প্রায় ৩২%) গ্রুপের অন্যদের দেওয়া ভূল উত্তরের সাথে একমত প্রকাশ করেছে। এবং যে ১২টি ট্রায়ালে অন্যদের বলা হয়েছিল ইচ্ছে করেই ভূল উত্তর দেওয়ার জন্য প্রায় ৭৫% এর মতন পার্টিসিপেন্ট অন্তত একটি ট্রায়ালে হলেও অন্যদের দেওয়া ভূল উত্তরের সাথে সহমত জানিয়েছিল। আর ৩৭ জনের অন্য যে গ্রুপটি নেওয়া হয়েছিল তাদের ক্ষেত্রে এই ভূল উত্তর দেওয়ার প্রবণতা ছিল ১% এর চেয়েও কম।
এখন কথা হচ্ছে, ভূল আপনি-আমি সবাই করতেই পারি, এটা নিয়ে এত হইচই করার কি আছে! আছে। এক্সপেরিমেন্টের পরে আলাদা আলাদাভাবে প্রত্যেক পার্টিসিপেন্টের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। সেখানে তারা জানায় যে, যেসব ভূল উত্তরগুলো তারা দিয়েছে সেগুলো যে ভূল সেটা তারা বুঝতে পারেছিল (!) তবুও যেহেতু রুমের অন্যান্য সবাই সেটাকেই সঠিক বলে দাবি করছিল, তাই তারা সেটাই উত্তর দিয়েছিল। তাদের আলোচনা থেকে অন্যদের সাথে সহমত প্রকাশ করার দুটো কারণ পাওয়া যায়,
এক, তারা নিজেদেরকে গ্রুপের বাইরের কেউ হিসাবে চিন্তা করতে ইচ্ছুক ছিল না।
দুই, তাদের ধারণা ছিল গ্রুপের অন্যান্যরা তাদের চেয়ে অধিক জ্ঞান রাখে।
অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে আমারা যেই গ্রুপে থাকি না কেন, তার সদস্যদের একটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে, যেটাকে আমরা বলছি গ্রুপ প্রেশার (Group Pressure)। এই গ্রুপ প্রেশার আবার কয়েকটি ফ্যাক্টর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
প্রথমেই গ্রুপের সাইজ কিংবা সদস্য সংখ্যা কত হবে। দেখা গেছে যে, যদি কেবল মাত্র একজন হয় তাহলে তার সাথে একমত প্রকাশ করার হার মাত্র ১%। আর যদি সদস্য সংখ্যা দুইজন হয় সেক্ষেত্রে সেটা বেড়ে গিয়ে পার ১৩% এ দাড়ায়। এবং যদি তিনজন হয় তাহলে একমত হওয়ার হার হয় ৩২%। কিন্তু সদস্য সংখ্যা যদি আরো বেশি হয় সেক্ষেত্রে তাদের মতামতের সাথে একমত হওয়ার প্রবণতা খুব একটা বৃদ্ধি পায় না।
দ্বিতীয়ত গ্রুপের সকলের মতামত একই কিনা। অ্যাশ’এর যে এক্সপেরিমেন্টে আগে থেকেই ঠিক করে রাখা সাতজন ছিল তারা সকলেই একই উত্তর দিয়েছিল। যদি এমন হত সাতজন ভিন্ন ভিন্ন উত্তর দিত, তাহলে? ১৯৫৬ সালে পরবর্তীতে এই এক্সপেরিমেন্টি আবার করা হয়, তখন দেখা যায় আগে থেকে ঠিক করে রাখা ব্যক্তিদের মধ্যে কেবলমাত্র একজনের উত্তর ভিন্ন হওয়ার কারণে গ্রুপের সকলের সাথে একমত হওয়ার প্রবণতা প্রায় ৮০% এর মতন কমে গিয়েছে!
তৃতীয়ত, যে কাজটি করতে হবে সেটা যদি জটিল হয়। অ্যাশ’এর এক্সপেরিমেন্টে উত্তর দেওয়ার জন্য তিনটি করে অপশন ছিল, যদি এমন হত চারটি অপশন হতে সঠিক উত্তর বেছে নিতে হত, তাহলে? দেখা গেছে, কাজ যত বেশি জটিল হয়, গ্রুপের অন্যান্যদের সাথে সহমত প্রকাশ করার প্রবণতাও তত বেশি বৃদ্ধি পায়।
চতুর্থত, গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদের সামাজিক মর্যাদা বা অবস্থান যদি ভালো হয়, তাহলে তাদের সাথে একমত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
শেষপর্যন্ত দেখা যাচ্ছে মানুষ হিসাবে নিজেকে যতই দাবি করি না কেন, আমি সমাজ বিচ্ছিন্ন কিংবা আমার চিন্তা-চেতনা কেবলই আমার, সেটা কতখানি সত্য সে সম্পর্কে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে!
Comments
Post a Comment