Posts

আমরা কেন ঘুমাই?

Image
হাস্যকর বলে মনে হলেও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তরের ক্ষেত্রে বড় একটি সীমাবদ্ধতা হলো, নির্দিষ্ট কোন কার্যকরণটি (causal-effect) ঘুমের সাথে জড়িত সেটি আমরা বলতে পারি না! যেকারণে ঘুমের কারণ খুঁজতে যেয়ে আমাদের বেশ কয়েকটি ব্যাখ্যার দ্বারস্থ হতে হয়েছে। ইভালিউশনারি সাইকোলজির দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে , ঘুম আমাদের মধ্যে একধরণের টিকে থাকার হাতিয়ার হিসেবে রয়েছে। আদিম অবস্থায় , রাতে চলাফেরা করা বেশ বিপদজনক ছিল। এসময়ে দেখা গেল , যে সকল প্রানী রাতে চলাফেরা করত তারা বেঁচে থাকা কিংবা অন্যন্য ক্ষতির ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে চুপচাপ থাকা প্রাণীদের চেয়ে বেশি সুবিধা পেত। প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে টিকে থাকার এই পদ্ধতি ঘুম হয়ে প্রানীর মধ্যে রুপান্তরিত হয়েছে। ১ কিন্তু , নিরাপত্তাই যদি ঘুমের কারণ হয়ে থাকে , তাহলে সেটা কতটা যথাযথ এবং বিশেষ করে নিশাচর প্রানীদের ক্ষেত্রে কতখানি যুক্তিসংগত এরকম বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দেয়। আরেকরকম ব্যাখ্যা এসেছে , যদিও বর্তমান সময়ে খাদ্যের অনেকগুলো উৎস আছে , কিন্তু   আদিম অবস্থায় খাবার ছিল এক দুর্লভ বস্তু। একবার খাওয়ার পরে , পরেরবার কখন খাব সেটা ঠিক ছিল না। সে...

বিনীতা এখন কেমন আছো

Image
        আজন্ম রবীন্দ্রনাথের আবহে বেড়ে উঠা প্রজন্মের কাছে বিষ্ময়ের মত ছিল জীবনানন্দের কবিতার পাতা ফুঁড়ে উঠে আসা মহীনের ঘোড়াগুলি আর তাদের মায়াবী ডাক। ভীতু মানুষের ভীড়ে অস্থির সেই মুহূর্তটিতে ' মহীনের ঘোড়াগুলি '  একটি স্বপ্নের নাম , আবার একটি স্বপ্নভঙ্গের নাম। এবং একটি আন্দোলনের নাম। দুঃখী মানুষের শোকে কনসার্টে গান গায় কত মায়েস্ত্রো         ৭০ ' এর মাঝামাঝির উষ্ণতম দিনগুলোতে এসেছিল ,  পরিবর্তনের হাওয়া ছড়িয়ে   বয়ে এনেছিল বাংলা গানে এক নতুন ধারার সঙ্গীত। গিটার , ভায়োলিন আর সেক্সোফোন ছুঁয়ে সেই সাঙ্গীতিক পরিবর্তনের সুর পৌছে গিয়েছিল পার্কস্ট্রীটের সাহেব পাড়া থেকে কলকাতার অলিগলি পর্যন্ত। এবং কলকাতার গতানুগতিক সঙ্গীতের ধারা বদলে যাওয়ার কথা আলোচনা করতে হয় তাহলে সবার আগে ' মহীনের ঘোড়াগুলি ' র নাম বলতে হবে।   যদিও ৬০ ' এর শেষে কিংবা ৭০ ' এর শুরুতে বাংলা গানের মরণদশা ছিল না , তবুও সে সময়টাতে গতানুগতিকতার প্রভাবটা প্রবল...

দাগ থেকে যদি ভালো কিছু হয় তবে!

Image
ছোট একটা গল্প বলি। ছোট একটা বাচ্চার গল্প। ছোট বললে কি হবে ততদিনে রীতিমত কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে রোজ স্কুলে যাওয়া-আসা শুরু করে দিয়েছে। ছড়া শুনে, রাইম পড়ে, ছবি আঁকে, গান গায় আরো কত্ত কি। কিছুদিন পরে দেখা গেলো স্কুলের বাংলা, ইংরেজি কিংবা অন্যান্য বিষয়গুলো আয়ত্তে চলে এলেও ঐ অংকটা জানি তার কাছে কেমন কেমন মনে হচ্ছে। প্রথম প্রথম একটা একটু ভয় ভয় লাগত কিন্তু আস্তে আস্তে দেখা গেলো অংকের নামটা শুনলেও গলাটা কেমন জানি শুকিয়ে আসছে! বুক ধড়ফড় করে! এবার আরেকটা গল্প। মানুষটা কিন্তু আগে থেকে এরকম ছিল না। আগে অন্তত বিয়ে-শাদী, জন্মদিনের মতন অনুষ্ঠানগুলোতে সবার সাথে তেমন একটা কথাবার্তা না বললেও অন্তত যেয়ে চুপচাপ খেয়েদেয়ে চলে আসত। আর এখন যে কি হলো যাওয়া তো দূরের কথা এরকম কিছুতে যেতে হবে শুনলেই যেন পালিয়ে বাঁচে!       স ময়টা ছিল বিহেভিওরিজমের (Behaviorism), কগনেটিভ সাইকোলজি (Cognitive Psychology) তখনো আসি আসি করছে। ‘মন’ নামক রোমান্টিকদের প্রিয় রহস্যময় এই বস্তুটিকে অনেকদিন ধরেই কাঁটাছেড়া চললেও গত আঠারো শতকের শেষের দিকে এই প্রথম ‘মন’কে ল্যাবরেটরির ভেতরে আনা হয়। কিন্তু তখনো সেটা ছিল ...

অ্যাশ'এর কনফর্মিটি এক্সপেরিমেন্ট: আপনার মতামত কতখানি আপনার?

Image
স্ট্যাটিস্টিকস পরীক্ষা। পরীক্ষা দিচ্ছেন, কিন্তু একটা প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আপনি নিজে সন্দিহান। আপনার উত্তরটা সঠিক কিনা বুঝতে পারছেন না! মাথা ঘুরিয়ে আপনার পাশের বন্ধুটির কাছ থেকে উত্তরটি জেনে নিলেন। দেখা গেল তার উত্তরটিও আপনার কাছে সঠিক বলে মনে হচ্ছে না। এজন্য আপনি আরেকজন বন্ধুর কাছে সেটার উত্তরটা শুনে নিলেন। আপনার এই বন্ধুটিও ঠিক আগের উত্তরটাই দিয়েছে! আপনি তো পড়লেন মহাঝামেলায়! বন্ধুদের দেওয়া উত্তরটি আপনার কাছে সঠিক বলে মনে হচ্ছে না, আবার নিজেরটাও কেমন কেমন জানি মনে হচ্ছে! শেষপর্যন্ত আপনার উত্তরটি কেঁটে দিয়ে খাতায় তাদের উত্তরটাই লিখে দিয়ে আসলেন।  কিন্তু পরে দেখলেন যে আপনার উত্তরটাই ঠিক ছিল! কি নিজেকে আহাম্মক বলে মনে হচ্ছে? বারবার মনে হফফ চ্ছে কেন এই কাজটা করলেন? কেন অন্যদের কথা শুনলেন? কেন?    এমনই কিছু প্রশ্ন হয়ত উঁকি দিয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৬৫ বছর আগে সোয়ার্থমোর কলেজের অধ্যাপক ড. সোলোমন অ্যাশ’এর (Solomon Asch) মনের ভেতরে(তবে তার নিজের বেলায় পরীক্ষার সময় এমন কিছু হয়েছিল কিনা সেটা বলতে পারছি না)। এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি যে কাজটি করলেন কালের প্রভাবে সেটি জায়গা করে নিয়ে...

মিলগ্রাম এক্সপেরিমেন্টঃ নির্মমতা কি জন্মগত?

Image
“মহাশয়, আপনি কাহার পক্ষে, যুদ্ধের না শান্তির? বৎস, আমি শান্তির পক্ষে, কারণ শান্তির সময় পুত্র পিতার কবর খনন করিয়া থাকে, আর যুদ্ধের সময় পিতা পুত্রের।” এটা ছিল গ্রীক দার্শনিক হেরাক্লিটাস এবং তার শিষ্যের মধ্যকার কথোপকথন। যুদ্ধ নিয়ে আমরা যতই বলি না কেন, যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা/ যুদ্ধ মানে আমার প্রতি তোমার অবহেলা। তবে একথাকে অস্বীকার করা যাবে না, যুদ্ধের সময় জেনারেলের এক আদেশেই কত হাজার-হাজার নিরীহ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে!  কুখ্যাত জিউ হলোক্যাষ্ট, কিংবা রুয়ান্ডার গণহত্যা অথবা মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দেশেই যে গণহত্যগুলো হয়েছিল সেগুলোর দিকে নজর দিলে “মানবতা” কিংবা “মানবিকতা” ইত্যাদি শব্দগুলো হারিয়ে যায়। কিভাবে একজন মানুষ হয়ে নির্মমভাবে এতগুলো মানুষকে হত্যা করতে পারে! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় একটি কথা বেশ উচ্চারিত হয়েছিল, যেসকল সৈনিক এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিল তারা কেবল উপরওয়ালার হুকুম পালন করেছে মাত্র! তাহলে কি নিজস্ব বিবেক বলি, আর বিবেচনাবোধ যাই বলি না কেন এগুলো কি একসময় কতৃপক্ষের হুকুমের কাছে মাথানত করে ফেলে?...